প্রাথমিক শিক্ষার মান এবং ধারাবাহিকতা



 স্কুলপড়ুয়া  ৬২লাখ শিশু এখনো শিক্ষার বাইরে যাদের অধিকাংশের বাসস্থান শহর বা দুর্গম অঞ্চলে। ৪৬ লাখ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাওয়ার বয়সি।


প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলে-মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং সমতা তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। সফলতার দিকগুলো হল - সব শিশুর প্রাথমিকে ভর্তি হওয়া, শ্রেণিকক্ষে লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠা এবং অতি উচ্চ হারে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শেষ করা।


কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা শিক্ষার মান। নিম্নমানের কারণে শিশুরা উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় এবং এক পর্যায়ে ঝরে পড়ে। পূর্ণ যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা- এ সবই শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বহু বিদ্যালয়ে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। এর কারনে শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠানই দিনে দুই শিফট চালায়। শিক্ষকদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান, তাদের ওপর নজর রাখা এবং জবাবদিহিতার ঘাটতিও প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়।


২০১৩ সালের ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট অনুসারে, পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া প্রতি চারজন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র একজন গণিত ও বাংলায় উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করেছে।২০১১ সালে প্রাথমিক শেষ করা প্রতি দুইজন ছেলে শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনেরও কম এবং প্রতি তিনজন মেয়ের মধ্যে একজনেরও কম কার্যত লেখাপড়া শিখেছে।কিন্তু প্রাথমিকে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ হলেও মাত্র ৬৭ শতাংশ বা তার চেয়ে কম হারে শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের যোগ্যতা অর্জন করে। আর উচ্চ শিক্ষায় পৌঁছায় মাত্র ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী।


ইউনিসেফের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঝরে পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি চতুর্থ শ্রেণিতে, যে শ্রেণিটি প্রকৃতপক্ষে প্রাথমিক সমাপনীর প্রস্তুতি পর্ব। যে শিশুরা শিক্ষায় দুর্বল তাদের জন্য প্রয়োজন শ্রেণিকক্ষে বাড়তি সহযোগিতা।আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পরিবারের শিশুদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাগ্রহণে দুর্বলতা। সেকারণেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় পর্যায় থেকে ঝরে পড়ার ঘটনা ঘটছে।




প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অভিভাবকের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করা বন্ধ করা প্রয়োজন।সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা উপজেলাগুলোতে ৪৫ শতাংশ শিশুই স্কুলের বাইরে রয়েছে। কর্মজীবী শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু এবং দুর্যোগকবলিত প্রত্যন্ত এলাকার শিশুরা প্রায়ই শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।




শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার পেছনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি ক্ষতিকর সামাজিক রীতি-নীতিরও ভূমিকা রয়েছে। প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন শিক্ষার বাইরে চলে যায় মূলত বাল্যবিয়ে ও শিশু শ্রমের কারণে। শহরের ছেলে-মেয়েদেরই স্কুলে ভর্তির হার বেশি হলেও লেখাপড়ার বাইরে থাকা ছয় থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যেই খুব বেশি। এটাই বাংলাদেশের রাজধানীতে শিশু শ্রমের উপস্থিতির প্রমাণ দেয়।




নিরাপত্তার ঘাটতি এবং জনসমাগম স্থলে (পাবলিক প্লেস) যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের ব্যাপকতার কারণেও মেয়েরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে।মেয়ে ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামো ও পানির ব্যবস্থা, ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার সুযোগ-সুবিধা না থাকাটা মেয়েদের শ্রেণিকক্ষে পারফরম্যান্স এবং উপস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।


আমাদের সরকারের উচিত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিক্ষার হার নয় শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এবং অসহায় শিশু এবং পথ শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া। বাল্যবিবাহ দূর করে মেয়েদেরকে শিক্ষার আওতায় আনা এবং ছেলে মেয়ে সমান অধিকার নিশ্চিত করা। প্রত্যেকটি শিশু যেন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত ‌‌‌।


     লেখক: ব্লগার,রেজাউল হক






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ