নাস্তিকদের আত্মঘাতী যুক্তি

 যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়ম অনুযায়ী কারো বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এমন কোনো যুক্তি দেওয়া যাবে না, যে যুক্তি দিয়ে নিজের বিশ্বাসকেই ভুল প্রমাণ করা যায়। কিন্তু নাস্তিকরা দেখা যায় প্রায়শই যুক্তিবিদ্যার এই মৌলিক নিয়মকে লঙ্ঘন করে কিংবা অজ্ঞতাবশত আস্তিকদের বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। তাদের আত্মঘাতী যুক্তিগুলোর মধ্যে "স্রষ্টার পিতা বা কারিগর" যুক্তিটি অন্যতম।


উদাহরণস্বরূপ, আস্তিকরা যেহেতু ঘড়ির কারিগরের যুক্তি দিয়ে এই মহাবিশ্বের একজন মহান কারিগর থাকার কথা বলে সেহেতু নাস্তিকরা তার পাল্টা যুক্তি দেয় এভাবে:


ক) ঘড়ি বানায় ঘড়ির কারিগর। ঘড়ির কারিগরের পিতা আছে।


খ) মহাবিশ্ব বানিয়েছে মহাবিশ্বের কারিগর। মহাবিশ্বের কারিগরেও তাহলে পিতা থাকতে হবে।


গ) অতএব, ঘড়ির যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেই কারণে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলেও কিছু থাকতে পারে না!


এটি নাস্তিকদের একটি আত্মঘাতী যুক্তি। কারণ, তারা যেহেতু এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না সেহেতু তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়: প্রথম জীবের পিতা বা কারিগর কে? উত্তরে তারা বলবেন: প্রথম জীবের পিতা বা কারিগর থাকার দরকার নাই! অর্থাৎ তারা প্রথম জীবকে স্বয়ম্ভূ হিসেবে বিশ্বাস করেন – এমনকি মহাবিশ্বকেও – যদিও আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি যে, নিজে থেকে কোনো জীব সৃষ্টি হতে পারে না।


যাহোক, তাদের এই কু-যুক্তিকে এবার যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে খণ্ডন করা যাক।


প্রথমত- আস্তিকরা কখনোই বলে না যে, সবকিছুরই পিতা বা কারিগর বা স্রষ্টা থাকতেই হবে। আস্তিকদের কথা না বুঝে 'খণ্ডন' করার দাবি করলেই তো আর হবে না! সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টার কোনো পিতা-মাতা বা স্রষ্টা থাকতে পারে না। এই ধরণের যুক্তি নিতান্তই শিশুসুলভ ও হাস্যকর শুনায়। যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি একটি অসম্ভাব্যতা। কেননা সবকিছুরই পিতা-মাতা বা স্রষ্টা খুঁজতে গেলে অসীম পর্যন্ত যেতে হবে যেটি অবাস্তব।


দ্বিতীয়ত- সবকিছুরই স্রষ্টা থাকতে হলে এই মহাবিশ্বের কোনো অস্তিত্বই থাকতো না। কেননা সেক্ষেত্রে পরের স্রষ্টা তার আগের স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তো। যার ফলে কখনোই কিছু সৃষ্টি হতো না।


তৃতীয়ত- বিবর্তনবাদ বা যেকোনো ধর্মের আলোকেও যদি পিতা খুঁজতে খুঁজতে পেছন দিকে যাওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে প্রথম জীবের পিতা বা মাতা কেউই ছিল না! প্রথম জীব যদি কোনো ভাবে একটি ঘড়ি বানাতে সক্ষম হতো তাহলে সেই ঘড়ির কারিগরের কোনো পিতা-মাতা থাকতো না। অতএব, নাস্তিকদের এই যুক্তি একদমই ভুল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তো বটেই এমনকি তাদের নিজেদের বিশ্বাস বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও নাস্তিকদের "স্রষ্টার পিতা" যুক্তি কিন্তু সহজেই ধরাশায়ী হচ্ছে।


চতুর্থত- নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষই যদি স্বয়ম্ভূ (?) হতে পারে তাহলে স্রষ্টার স্বয়ম্ভূ হতে সমস্যা কোথায়? অতএব, তাদের যুক্তিই কিন্তু তাদের যুক্তিকে খণ্ডন করছে – যাকে বলে সেল্‌ফ-রেফিউটেড।


লিখছিলাম:রেজাউল হক, ব্লগার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ