প্রসঙ্গ:প্রবাসীর ঈদ

 ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ। এই কথা সবাই মানলেও প্রবাসীদের জীবনে এই কথারবাস্তবতা খুজে পাওয়া মুশকিল। প্রবাসীদের ঈদটা একটু অন্য রকম। প্রবাসেঅনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটা অত্যান্ত কষ্টের। মুসলমানদের জন্যসবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। এই ঈদকে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন আশাআকাংখা আর প্রস্তুতির কমতি থাকেনা। ঈদ আসে ঈদ যায় কিন্তু প্রবাসীশ্রমিকদের কষ্ট এতটুকুও কমেনা।


ফজরের আযানের পর দল বেধে ছুটা-ছুটি,দলবেধে পুকুরে ঘোসল শেষ করে সামান্যমিষ্টি মুখ করে নতুন জামা কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া এখন শুধুই স্মৃতি। এখনআর নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ঢাক দিয়ে বলেনা  সেমাই খেয়েযাও। এখন আর নতুন জামা পরে সালাম করলে কেউ নতুন টাকার নোটগুলো হাতে উঠিয়েদেয়না। এসবের একটাই কারন  আর তা হলো আমি এখন বাংলাদেশ থেকে অনেক অনেক দুরে।সৌদি আরবের মরু প্রান্তরে। হে আজ কথা বলছিলাম আমারই  পাড়ার বড় ভাই তানভীর আহমেদএর সাথে তুলে ধরেছি তার কিছু কষ্টের কথা।


এখানে ঈদ মানে শুন্যতা, ঈদ মানে না পাওয়ার কষ্ট। পবিবার পরিজন ছাড়া ঈদ যেকত কষ্ট তা একমাত্র প্রবাসীরাই বুঝে। সকাল হলেই ঈদ এখনো আছি ডিউটিতে। শেষরাতে ঘোসল সেরে সন্ধ্যা রাতের বাশী বাত এর বাশি তরকারী খেয়ে ঈদের নামাজেযাওয়ার প্রস্তুতি। পুর্বাকাশে সুর্য মামার দেখা পাওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়েযায় ঈদের নামাজ । এর মাঝে আসতে শুরু করবে দেশ থেকে আপনজনদের মিসকল আর খুদেবার্তা।


ঈদের প্রস্তুতি জানার জন্য ফোন করেছিলাম শারমিন কে। ভালো-মন্দ জিজ্ঞেসকরতেই পাশ থেকে আমার দুই বছরের ছোট মেয়েটি কি যেন বলতে চাইছে । তার মাকেজিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম সে বুঝাতে চেয়েছে  গতকাল বাজার থেকে আমার জন্যলাল টকটকে জামা আর বাঁশিওয়ালা জুতা এনেদিয়েছে। আর সেটা তার খুব পছন্দহয়েছে। ছোট্র মেয়েটার অস্পষ্ট কথাগুলো শুনে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো ।মা-মেয়ে দুজনের কথা শুনছিলাম আর চোখের পানি মুছতেছিলাম টিস্যু দিয়ে ।সবকিছুখুলামেলা না বললেও এতুকুটু বুঝতে পেরেছি ঈদে খরচ করার জন্য যে টাকাপাঠিয়েছি তা বর্তমান সময়ের জন্য যথেষ্ট নয়। বললাম আজকালের মধ্যেই আরো কিছুটাকা পাঠিয়ে দিবো টেশন করবেন না। জানলাম সবার জন্য কেনাকাটা শেষ। এখন শুধুঅপেক্ষা ঈদের দিনটীর জন্য। এতূকু জেনে ভালো লাগলো আমাদেরর কষ্টের উপার্জিতটাকা দিয়ে আমাদের পরিবার সুখে -শান্তিতে ঈদ করতে পারছে। এটুকুই প্রবাসীদের স্বার্থকতা।


ঈদের নামাজ আর দেশে  ফোন করার পর  কষ্টের তীর্বতাটাকে আরো ভারী করেঘুমানোর প্রস্তুতি। বুকফাটা কষ্ট আর যন্ত্রনাটাকে  বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়েচোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা যেন কষ্টের ভারটা একটু কমে।আর তাতেই দুপুর ঘনিয়ে পুর্বের সুর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে সামান্য কিছু মুখে দিয়ে দু'এক জন বন্ধুকে সাথে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের কষ্টের দিনটি।  তারপর অশ্রু মাখা মুখে বললাম ভাই ভালো থাকেন পরে কথা হবে। কারণ আমার কাছে ছিল না কোনো উত্তর ছিল না তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা। স্যালুট প্রবাসী ভাইয়েরা।

এ যেন আরেক জীবন যুদ্ধের নাম। পরিবারের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে অক্লান্ত পরিশ্রম প্রবাসী ভাইদের, আবার এদেরই রেমিটেন্সে আমাদের দেশ হয়ে উঠছে শক্তিশালী এই প্রবাসী ভাইয়েরা এই আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা। কিন্তু তাদের হাসির আড়ালে লুকানো দুঃখটা হয়তো কারো সাথে শেয়ার করার মতো না। তবুও তারা হাসিমুখের জীবন চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রদ্ধা আর ভালবাসা রইলো প্রবাসী ভাইদের প্রতি।   



সকল প্রবাসী ভাই বোনদের প্রতি রইলো ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা  ঈদ মোবারাক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ