প্রসঙ্গ:নীল

আজ থেকে চার বছর আগে অনুভূতির ইজারাদারদের হাতে প্রাণ দিয়েছে আমাদের   নীল। নীল কখনো অনুভুতিওয়ালাদের ক্ষতি করেছে বলেও আমাদের জানা নেই। তাদের চাপাতির বদলে নীলের সম্বল ছিল একটাই; লেখালেখি।


তো সেই লেখালেখি কাদের বিরুদ্ধে ছিল? কারও বিরুদ্ধে আদৌ কি ছিল? নবী রসুল কিংবা অবতারদের ব্যক্তিজীবনের যে কথাগুলো সে লিখেছে, সেটা কি ব্যক্তির বিরুদ্ধে গেছে? এমন তো নয় সে কখনো বানিয়ে বানিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখেছে। যা লিখেছে তা হয় কোন টেক্সট বা ইতিহাস থেকেই লিখেছে। কেন লিখেছে?


অবতারদের প্রতি তাঁদের ভক্ত বা উম্মতদের যে উন্মাদনা, সেটাতো নীল বা যারা যারা লিখেছেন তারা তৈরি করেন নি। নবী-রসূল বা অবতারদের বিরুদ্ধে কিংবা তাঁদের তৈরি টেক্সটের সমালোচনা বা জীবনালোচনা করা যাবে না এমন ফতোয়া যেসব মৌলবাদী দিয়েছেন, নীলেরা তো সেখানে আঘাত করতে চেয়েছেন।


মৌলবাদীরা যে নবী-রসূলদের জীবনাচরণ শুনিয়ে মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে, যে কিতাব-পুঁথি বা টেক্সটের ধোঁয়া তুলে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিকভাবে মানুষকে হাজার হাজার বছর ধরে বন্দি করে রেখেছে, যে অলৌকিক শক্তির ভয় দেখিয়ে মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে হরণ করেছে সে ধর্মের, সে আইডলজির মানুষদের ব্যক্তিজীবনের অসঙ্গতিগুলো উন্মোচন করতে চেয়েছে নীল।


যেন আফিমাসক্ত মানুষের মোহমুক্তি ঘটে। যাতে করে তারা এটা অন্তত মনে করে নবী-অবতারদের জীবন আর দশজনের মতই স্বাভাবিক ছিল। ‘রিপুর তাড়নায়’ তারাও অনেক অনৈতিক কাজ করেছেন। যাতে করে সাধারণ ধার্মিকেরা মৌলবাদের কণ্টকাকীর্ণ পথে পা না বাড়ায়। নিদেনপক্ষে যেন মৌলবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হয়।


নীল মৌলবাদী সিস্টেমের সমালোচনা করতে গিয়ে কখনো কখনো সে সিস্টেম যেসকল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে তাদেরও ছেড়ে কথা বলেনি। আইডওলজির কথা বলতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আইডলদের নামও চলে এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক, নীলরা যাদের জন্য লিখতে চেয়েছে তাদের তো উপলব্ধি হয়ই নি, কখনো কখনো আমরাও তাদের বুঝতে পারি নি।


নীল আজ নেই। আমাদের অনেক বন্ধুই আজ নেই। তবে সেই পুরনো প্রশ্ন আবার নতুন করে মনে জাগে-কাদের জন্য এই জীবনোৎসর্গ? যাদের মোহমুক্তির জন্য এতো রক্ত ঝরল তারা কি ভালো আছে?

নীল,রাজিব,রুহান, সোহন,সহ নাম-না-জানা অনেকেই ব্লগার সাংবাদিক, এমনকি ফেসবুকে লেখালেখি দাড়ি অনেক ভাইরা আজ পৃথিবীতে নেই। কিন্তু তাতে কি বদলে গিয়েছে আমাদের এই গণতন্ত্রহীন দেশ।এখন কারো বিরুদ্ধে কলম ধরা মানেই হচ্ছে নিজের মৃত্যু অনিবার্য। তারপরও থেমে নেই আমাদের বাংলার ক্ষুদ্র প্রয়াস থেমে নেই আমরা ব্লগার সাংবাদিকরাও। আমাদের পরিবার আছে কে দেবে আমাদের নিরাপত্তা। আজ নীল পৃথিবীতে নেই কিন্তু তার পরিবারটি বেঁচে রয়েছে । কে এসে দায়ভার নেবে নীলের পরিবারের। আপনি? আমি? কেউ না। আর আমাদের এত প্রচেষ্টা জানি ব্যর্থ হবে না। হয়তো কোন একদিন সত্যের জয় হবেই হবে ।নিলসহ অনেক ব্লগারদের একটাই দাবি ছিল মানুষ সত্যি জানুক। মানুষ জানুক দেয়ালের আড়ালের কথা সন্ত্রাসী করে দেশ চালানো যায় না। নীল এর মত হাজার ছেলে রয়েছে এই বাংলার বুকে কত কলম আপনি বন্ধ করবেন। 

লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক।





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ