বাংলাদেশ ও শিক্ষাব্যবস্থা!

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষাই পারে মানুষকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে। শিক্ষা মানুষের মন মস্তিষ্ক চলাফেরা সবকিছুর পরিবর্তন ঘটায়। আর এজন্য চাই মানসম্পন্ন যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা। মানসম্পন্ন শিক্ষার দাঁড়াই ভালো মানের শিক্ষা আসা করা যায়।

 

ছবি: ইন্টারনেট

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই নড়বড়ে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ওই লেভেলে পৌঁছাতে পারেনি। বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা প্রযুক্তিনির্ভর হলেও দুঃখের ব্যাপার বটে বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা প্রযুক্তিনির্ভর বা কারিগরি মাধ্যমে নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পদে পদে বিভক্ত। যেমন,বাংলা মিডিয়াম, ইংলিশ মিডিয়াম, আলিয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদসা। আর এই সব জায়গায়ই শিক্ষাব্যবস্থার ডিফারেন্ট ভাবে তৈরি করা হয়েছে। অথচ আমরা যদি উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাই যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি এখানে আমরা দেখতে পাই একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত। আমাদের দেশে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা হয় নানা সমস্যায় জর্জরিত আমরা।



বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমি প্রথম কথা বলছি এমনটি নয়, পূর্বে অনেকেই বলেছেন অনেক জ্ঞানীগুণীরা এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। কিন্তু  দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে এত অসংখ্য সমস্যা অসঙ্গতি চোখে পড়ে। এখনো এক-তৃতীয়াংশ লোক নিরক্ষর। তার উপর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতি বড় সমস্যা বলে আমার মনে হয়। প্রাথমিক থেকে উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষানীতি পদ্ধতি কৌশল ও ব্যবস্থাপনা সকল ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিশৃঙ্খলা অবস্থা বিরাজ করছে।



প্রাথমিক শিক্ষা মানে শিশু শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সেখানে আমরা দেখতে পাই শিক্ষকদের উদাসীনতা, শিক্ষকের অভাব, জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবন পাঠ্যবইয়ের সংকটসহ অজস্র সমস্যা। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শিশু স্কুলে যেতে না চাওয়ার প্রধান কারণ হলো স্কুলের পরিবেশ। তারপর বর্তমানে গড়ে ওঠা কিন্টারগার্ডেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এগুলোর শিক্ষকের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে কম টাকায় শিক্ষক রেখে স্কুল এখন একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে সেজন্য শিশুরা গুণগত শিক্ষা পাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে দেখার কেউ নেই। সিলেবাস আর সাজেশন এর মধ্যে আটকে আছে আমাদের শিশুদের মেধা।বিকাশের কোনো সুযোগই নেই, সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে না।



আমাদের শিশুদের বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যম এবং কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে এখনো পশ্চিমা গল্প কাহিনী পড়ানো হয়। আমাদের জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য আর বিশ্বাসের বিষয়সমূহ যেখানে খুব কম গুরুত্ব পায় রাজনৈতিক দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির দুষ্টচক্র আমাদের শিশুর মস্তিষ্কের নানাভাবে বিকারগ্রস্ত করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সিলেবাস পরিবর্তন করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছে জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য আর বিশ্বাসের কোন সমন্বিত রূপ তুলে ধরা যাচ্ছে না ফলে এরা এক ধরনের দ্বিধাদন্দ্ব আরো স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড় হচ্ছে জাতীয় সংহতি ও উন্নত সমন্বিত প্রচেষ্টাকে ভণ্ডুল করার ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম ভূমিকা পালন করছে।



শিক্ষার্থীদের নকল প্রবণতা শিক্ষাব্যবস্থার মান হ্রসের অন্যতম কারণ।এই নাজুক অবস্থা একদিনে তৈরি হয়ে যায়নি। সার্টিফিকেট সর্বত্র শিক্ষার প্রতি অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্বলতা মূলত নকলের ব্যাপকতার জন্য দায়ী।এক্ষেত্রে সরকারকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বা রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।


অন্যদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষার মান হ্রস করতে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। পড়ালেখা না করেও সার্টিফিকেট এর পিছনে ছোটা শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের বিভিন্ন বড় বড় পদে চাকরি করছে যা দেশের জন্য জাতির জন্য ধ্বংস বয়ে আনবে।


আবার অন্য প্রসঙ্গে কথা বললে বর্তমান শিক্ষকেরা কোচিং সেন্টারের নামে যে ব্যবসা খুলে বসেছেন তাও শিক্ষা ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি স্কুলে ভালো না পুরানো কিন্তু কোচিং সেন্টারে অন্যভাবে কেয়ারিং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাধ্য হয়ে কোচিং সেন্টারে পড়তে হচ্ছে।


আমার মতে এসব নানাবিধ শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা নীতি ব্যবস্থাপনা, পরিচালনায় সবকিছু দায়ী। মূলত মুখস্ত নির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর না হওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থার জর্জরিত। এসব সমস্যা থেকে সমাধান পেতে ডিজিটাল লার্নিং ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা অতি জরুরী।


আমরা যদি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে স্কুল ইন ক্লাউড, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউডে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে দেশের সব শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় চলে আসবে। আবার আমাদের শিক্ষার্থীরা যে কোনো দুর্যোগকালে এই ক্লাউড ব্যবহার করে ঘরে বসে ক্লাস করতে পারবে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। ফলে কয়েক মাস ধরে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বা ক্লাস থেকে দূরে রয়েছে। যদি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এই পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। আর যদি আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট করতে চাই অথবা আমাদের সমাজকে স্মার্ট করতে চাই, তাহলে শুধু তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণ ও জ্ঞান আহরণ এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করলে হবে না। আমরা সমাজে কিভাবে মিলেমিশে বসবাস করব, কিভাবে উৎকর্ষ সাধন ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ তৈরি করব সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।


স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ ক্লাউড নির্ভর। এখানে কোনো ধরনের হার্ডওয়ারের প্রয়োজন হবে না। এই শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে- প্রথমত, স্কুল ইন ক্লাউড; দ্বিতীয়ত, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং তৃতীয়ত, রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউড। এগুলোর প্রতিটি একেকটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটিকে ট্রেনিং টুল হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে ট্রেনিংয়ের বিষয়গুলো থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখান থেকে শিখতে পারবে।


আমরা যদি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে স্কুল ইন ক্লাউড, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউডে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে দেশের সব শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় চলে আসবে। আবার আমাদের শিক্ষার্থীরা যে কোনো দুর্যোগকালে এই ক্লাউড ব্যবহার করে ঘরে বসে ক্লাস করতে পারবে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। ফলে কয়েক মাস ধরে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বা ক্লাস থেকে দূরে রয়েছে। যদি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এই পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। আর যদি আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট করতে চাই অথবা আমাদের সমাজকে স্মার্ট করতে চাই, তাহলে শুধু তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণ ও জ্ঞান আহরণ এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করলে হবে না। আমরা সমাজে কিভাবে মিলেমিশে বসবাস করব, কিভাবে উৎকর্ষ সাধন ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ তৈরি করব সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।


লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ