সেবাই নাকি পুলিশের ধর্ম???

 বাঘে ছুঁলে আঠারো আর পুলিশে ছুঁলে ৩৬  ঘা একথা আমরা ভুলে যাই নি। ভুলে যায়নি এ কারণে যে আমাদের সমাজে ক্ষণে ক্ষণে কেউ না কেউ আমি নই তো আপনি প্রতিনিয়ত পুলিশের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছি ।এটি আর এখন প্রবাদ নয় বাস্তবতা নির্মম বড়ই কঠিন। 

পুলিশের কাজ দেশকে মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া । মানুষ আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সে গুলোকে আইনের আওতায় এনে বিচার কার্য করা। এগুলো ঠিক হচ্ছে পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু বাংলাদেশ নয়। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা পুলিশের কর্মকান্ড গুলোতে এমনই দেখতে পায় তারা মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষকে সাহায্য করা এবং মানুষের জন্য কাজ করে যায় এবং দেশ এবং মানুষকে নিরাপত্তা দেয় শত্রু থেকে মুক্ত রাখে ।কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাদের সাথে সাথেই আইনের আওতায় এনে শাস্তি সবার জন্য অনিবার্য মন্ত্রী বা নিম্ন স্তরের মানুষের জন্য তা নিশ্চিত করে।

সেদিন মদিনা মার্কেট পয়েন্ট থেকে গাড়িতে উঠে কাজিরবাজার সেতুর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম পথিমধ্যে রিকাবী বাজার পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ গাড়িতে সিগন্যাল দিল ড্রাইভার রাস্তার পাশে গাড়িটি পার্কিং করল। এবার পুলিশ কাছে এসে গাড়ির কাগজপত্র চাইল এবং ড্রাইভার সব কাগজপত্র দেখালো। সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও ট্রাফিক পুলিশ বলল কাগজের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা আছে তোমাকে একটু স্যারের সাথে কথা বলতে হবে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে একটু দূরে গিয়ে অন্য পুলিশের  সাথে কি যেন কথা বললো পাঁচ মিনিট পরে আবার ফিরে এলো অশ্রুসিক্ত চোখে,চেহারা মলিন। কৌতূহলবশত জানতে চাইলাম ভাই কি এমন হয়েছে যে আপনার চেহারা মলিন হয়ে গেল, ড্রাইভার অশ্রুসিক্ত চোখে বলছিল :ভাই আমগো গরিবদের কি আর কোনো অধিকার আছে? আমরা তো শুধু মার খাওয়া আর টক আর জন্যই জন্মেছি। এবার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলেও কৌতুহল যেন বেড়েই চলল কি এমন হলো পাঁচ মিনিটে যার ফুরফুরে মেজাজ টা এখন মলিন। এবার নড়েচড়ে বসে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই একটু বিস্তারিত বলবেন কি কি হলো?

ড্রাইভার বলা শুরু করলো ভাই এই রোডে যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে তারপরও শুধু ট্রাফিক পুলিশদের কে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে মাসে ৬০০০ টাকা দিতে হয়। আমিতো পুরাই অবাক ? এ আবার কেমন সেবা? অথচ যে জায়গাতে দাঁড়িয়ে পুলিশ টাকা নিচ্ছে ঠিক তার পাশের দেয়ালে লেখা  "আমার পুলিশ আমার থানা যাতায়াতের নেইকো মানা।" 

Rajaulhok00.blogspot.com
মোবাইলে ধারণকৃত


ড্রাইভার প্রতিদিন কত টাকা ইনকাম করে। একজন ড্রাইভার মালিককে প্রতিদিন ৪৫০/৫০০টাকা দিতে হয়। প্রতিদিন গ্যাস বাবদ ২০০ টাকা খরচ হয়। প্রত্যেক ড্রাইভার এর চা পান সিগারেট এর নিচে আরো 50 টাক। পুলিশকে যদি আরও ২০০ টাকা করে প্রতিদিন দিতে হয় তাহলে তার পরিবারের জন্য সে কত টাকা বাঁচাতে পারবে? কিভাবে সম্ভব একজন ড্রাইভার ৮০০ টাকা বাছার পর। তার পরিবারের জন্য কিছু টাকা সঞ্চয় করবে?কিভাবে  তার পরিবারের ভরণ-পোষণ,তার পরিবারের শিক্ষা,চিকিৎসা, মৌলিক চাহিদা মেটাবে? আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচুর টাকা ঢালতে হয় ।আমাদের দেশের চিকিৎসা সেবা যেন এক অন্য রকম ব্যবসা সেখানে একজন ড্রাইভার হিমশিম খায় পরিবার চালাতে। ২০১৪ সালের এক পেক্ষাপটে দেখা যায় দেশের ৯০% ড্রাইভার এর পরিবারের উপার্জন ক্রম ব্যক্তি একজন। কি করে সম্ভব একজন ড্রাইভার এর পক্ষে তার পরিবার চালিয়ে তার সন্তানদের মানুষ করে তোলা প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে?

এতো শুধু ট্রাফিক আর রাস্তার নিয়ম। এবার মনে করিয়ে দিতে চাই ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই সব গণমাধ্যমের প্রধান খবর-এর কথা । সেদিন দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমের জায়গা করে নিয়েছিলেন মাহবুবুর রহমান সুজন। ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে এমন মগের মুল্লুকে পড়ে যান দিশেহারা সুজন। আর এ চাঁদার টাকা না দেয়ার অপরাধে  মিরপুর থানায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে সুজন কে । ৯ফেব্রুয়ারি ২০১৪ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বিনা দাওয়াতে এসে অশ্লীলভাবে নিত্য করছিলেন এসআই জাহিদ সামাজিক পরিবেশে এভাবে নিত্য না করার অনুরোধ করেন পল্লবী এলাকার ব্যবসায়ী জনি। আর তাতেই কাল হয় তার । এসআই জাহিদ তখন রকি ও তার ভাই জনি কে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশের গাড়িতে । পরদিন রকি বাসায় ফিরলেও যনি লাশ হয়ে ফিরে বাড়িতে। এসআই জাহিদ সাময়িক বরখাস্ত হলেও এক মাস পর মিরপুর থানায় বিশেষ তকবীরে নিয়ে আসা হয় তাকে। এমন খবর শুনে মিরপুর বাঁশি অবাক হয়েছেন , অবাক হয়েছেন পুরো বাংলার মানুষ। 

এত ২০১৪ সালের ঘটনা ২০১৫ তে দর্শন ১৬তে ডাকাতি গুষ্টিকে সাহায্য  ১৯ সে মাদক এবং অস্ত্র চালানো সহযোগিতা ২০সে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এসআই  আকবর বউ এবং শালকের নামে কানাডা বাড়ি নির্মাণ। এমন হাজারো ঘটনা এখন যেন সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে। দিন দিন যেন বেড়ে উঠছে পুলিশের দাপট। কে বা কারা এ শক্তির উৎস? প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে? পুলিশ তো জনগণের বন্ধু? দেশকে রক্ষা করাই নাকি পুলিশের ধর্ম? মানুষের আস্থা থাকার কথা যেখানে সেখানেই দূর্নীতি-অনিয়ম চোখে পড়ার মতো ।তবু আমাদের সরকার  কীনাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে?

কতিপয় কিছু পুলিশ কর্মকর্তার জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীকে আমি হেয় প্রতিপন্ন করবো না । মুখোশের আড়ালে থেকে একজন মিষ্টিভাষী পুলিশ কর্মকর্তা ভিতরে কতটা নির্মম হতে পারেন তা আমাদের বুঝার বাইরে। আমরা চাই পুলিশ জনগণের বন্ধু বলে যে কথা সবাইজানে ,সে কথা যেন সত্য হয়।

লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক।










মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ