দুর্নীতির কারণে বন্ধ রাস্তার কাজ!
২০১৫ পর গ্রামের বাড়িতে আর তেমন যাওয়া হয়না ছোটবেলার স্মৃতি অনেক বন্ধু-বান্ধব এখন কেবল অতীতের স্মৃতি মাত্র। তবে প্রায় শুনতে পেতাম গ্রামের রাস্তার নাকি বেহাল অবস্থা ২০২০ সালের শুরুতে বেশ কয়েকবার যেতে হয়েছে গ্রামের বাড়িতে। রাস্তার ভোগান্তি বাড়ি ফেরার আনন্দ যেন মাটি করে দেয়। আমি তো মাত্র একদিন আর দুদিন সপ্তাহে যেতাম কিন্তু যারা প্রতিনিয়ত এই রাস্তায় চলাফেরা করেন তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে? কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন সরকার এতদিন ধরে এই রাস্তা সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না কেন? গ্রামের চেয়ারম্যান মেম্বার তারা কতটুকু চেষ্টা করছেন রাস্তার কাজের জন্য?
সংস্কারের অভাবে বেহাল চন্ডিপুল থেকে জালালপুর এর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি। লালাবাজার থেকে ৯নং ওয়ার্ডের ভিতর দিয়ে জালালপুর বাজারে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার রাস্তাটি চরম বেহাল দশা। গোটা রাস্তায় পিচের আস্তরণ উঠে অংসখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক বর্ষণে ওই সব গর্তে জল জমে প্রায় ডোবায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। যাতায়াত করাই দুষ্কর।
ছবি:নিজ
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চন্ডিপুল থেকে বামে যে সড়কটি সেটিই সিলেট-সুলতানপুর সড়ক। তবে বর্তমানে এটিকে আর সড়ক বলে মনে হয় না। এই সড়ক দিয়ে দুই উপজেলা দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জের ১০টি ইউনিয়নের জনসাধারণ যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় ২৫ কিলোমিটার এই সড়কের অধিকাংশ স্থান খানা গর্তে পরিপূর্ণ
গুরুত্বপূর্ন চন্ডিপুল টু জালালপুর বাজার রাস্তাটি চন্ডিপুল পয়েন্ট থেকে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড ও সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে ব্লকের রাইপুর পশ্চিমবাড়, দুলালপুর ও সিলাম বাদলপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভেতর দিয়ে রামনগর -২ ব্লকের মৈতনা গ্রামপঞ্চায়েতের কাঠপুল বাজার পর্যন্ত গিয়েছে। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কমবেশী ৫০হাজারেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করেন। চলে অংসখ্য ট্রেকার, বাস ও মিনিবাস। অপরদিকে লালাবাজার টু জালালপুর যাবার একমাত্র রাস্তা এই হচ্ছে এটি। প্রতিদিন কমবেশি ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়ে।
খানাখন্দে ভরপুর রাস্তাটিতে হাসহামেশাই ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনা। বেহাল রাস্তা দুটির অবিলম্বে সংস্কারের দাবি তুলেছেন স্থানীয় মানুষজন। চন্ডিপুল কংগ্রেস সভাপতি শেখ এরশাদ আলি অভিযোগ করেছেন দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি সংস্কারের পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদ এমনকী পূর্ত দফতরের কোনও হেলদোল নেই। অপরদিকে ৬নং ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান চৌধুরী পীর ইকবাল বলছেন ভিন্ন কথা। বরাদ্দ হয়েছে নাকি ২০১৭সালে কিন্তু এখন২০২০ তাহলে রাস্তার কাজ হচ্ছে না কেন?
চেয়ারম্যানের দাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চাঁদা দাবি করছে। তার জন্য ঠিকাদার আসে কিন্তু চাঁদা আর বাজেটের হিসেব মিল করতে না পারায় কাজ রেখে চলে যায়। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে এভাবেই কেটে গেছে। এলাকার মেম্বার আবু মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায় যত টাকা বাজেট হয়েছে তার পাঁচ ভাগের ২ ভাগ উনাদের হাতে পৌঁছেছে।বাকি টাকা গুলো নাকি পৌছাতে পৌছাতে স্তরে স্তরে গায়েব হয়ে গেছে। এগুলো বাংলাদেশের নতুন কিছু নয় কিন্তু বাকি দুই পার্সেন্ট দিয়ে তো কাজ করা যায়, করা দরকার।তাতে অবার ভাগ বসাচ্ছে ছাত্রলীগ। তাহলে কিভাবে শেষ হবে রাস্তার কাজ? কিভাবে মানুষ শান্তিতে যাতায়াত করবে? আর কাদের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে? প্রশাসন তাহলে কি করছে? এমন হাজারো প্রশ্ন কিন্তু কোন উত্তর নেই।
অথচ এই রাস্তার ধারেই রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা স্কুল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামপঞ্চায়েত কার্যালয়। প্রতিদিন তাই এই রাস্তা উপরই নির্ভর করেন হাজার হাজার বাসিন্দা। যাত্রীবাহী বাস বা ট্রেকার গুলির অবস্থা এমনই যে অধিকাংশ সময়ই স্থানীয় মানুষকে যেতে হয় ছাদে উঠে কিংবা ঝুলে। কিন্তু এই খানাখন্দে ভরা রাস্তায় ছাদ বোঝাই বাস বা ট্রেকারে যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
অপরদিকে চন্ডিপুল পয়েন্ট থেকে জালাল পুরের রাস্তা কোন বাজেটই পাস হয়নি এখনও পর্যন্ত। অথচ এই রাস্তা ধরে ৫০ হাজার মানুষ প্রতিদিন আনাগোনা করছে। কেনই বা সরকার হাতে নিতে চাইছে নায়ক প্রকল্প অথচ সংসদে আমাদের মহান মন্ত্রী বলে আসছেন সিলেটের রাস্তায় নাকি কোন ভাঙ্গন নেই সিলেটের সব রাস্তায় নাকি পিছ যানজটমক্ত। এ গাফলতি কার? কে নেবে তার দায়ভার? কবে লুগব হবে মানুষের কষ্ট?
এ রাস্তা সংস্কার নিয়ে ২০১৮সাল এবং ২০১৯ সালে দুই দুইবার সিএনজি অটো রিস্কার সমিতিসহ রাস্তায় নামে আমজনতা এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। টানা কয়েকদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়।হরতালসহ অনশন পালন করা হয়। তবুও সরকারের চোখ পড়ছে না কেন? একটা গণতান্ত্রিক দেশে মানুষের অধিকার এবং মানুষের নিরাপত্তা নেস্ত থাকে সরকারের হাতে। যেখানে সরকারী নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে, ভোটের সময় আসলে ঠিকই তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বেড়ে যায়।বাকি সময়টা নিশ্চুপে কেন?
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর আগে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা প্রকল্পে নামমাত্র কাজ হয়েছিল বটে। কিন্তু তা এমনই নিম্নমানের যে দিন কয়েক যেতে না যেতেই রাস্তার অবস্থা আগের মত বেহাল। তারমানে এখনো সূক্ষ্ম কারচুপি, রাস্তার বরাদ্দ টিকি আসছে কিন্তু কন্টাকদার আর প্রকৌশলীদের মাঝে ভালো বোঝাপড়া তৈরি হওয়ায় রাস্তার কাজে ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
কেশবপুর শ্চিমবাড় গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার নামাল কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক যুনেল কান্তি বলেন, ‘‘প্রতিদিন শহর থেকে মোটর বাইকে করে স্কুলে যেতে হয়। সে যেন বিভীষিকা। রাস্তায় অসংখ্য গর্ত। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।”
সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল না থামার পিছনে পুরাতন রাস্তা না সংস্কারের অন্যতম কারণ।একটা গ্রামের রাস্তায় যদি ছাত্রলীগের থাবা বসাতে হয়, ছাত্রলীগ আর ক্যাডার বাহিনীর চাপে পড়ে যদি রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।তাহলে চার লেন আর ছয় লেনের রাস্তার প্রকল্পে কি পরিমাণ দুর্নীতি হতে পারে,তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যেন ফুটে উঠে এই ছোট্ট রাস্তার কাজে।
ছাত্রলীগ সহ সকল ক্যাডার বাহিনীর কাছে একটাই অনুরোধ মানুষের কল্যাণে কাজ করুন মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষ আপনাকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেবে। শিক্ষা শান্তি প্রগতি শুধু আপনাদের ব্যানারে নয় বাস্তবতায় প্রয়োগ করুন।সরকার যেন অতি দ্রুত রাস্তাগুলো মেরামতের পদক্ষেপ নেই, এবং কড়া নজরদারির মাধ্যমে বরাদ্দকৃত টাকা রাস্তায় ব্যয় করে। এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।
লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন