ভিক্ষার অন্তরালে ব্যবসা!

রাস্তাঘাটে বের হলে আপনাদের চোখের সামনে পড়বে হাজারো পথশিশু ভিক্ষা পেশা বেছে নিয়েছে। তবে এই শিশুগুলোর পিছনে লুকিয়ে থাকে অচেনা কিছু দৃশ্য, অজানা কিছু গল্প। ধর্মীয় আর সামাজিকভাবে ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণার চোখে দেখা হই বলেই এখন ভিক্ষুকেরা শিশুদেরকে  ভিক্ষার কাজে ব্যবহার করছে। অর্থাৎ শিশুকে পুঁজি করে চলছে এ ভিক্ষার কাজ। কিন্তু কেন এবং কিভাবে এই শিশুগুলো এই পেশার সাথে জড়িয়ে পড়ছে? কার নৈপথ্যে চলে এমন কারসাজি?


ছবিঃইন্টারনেট




সংসার আর শারীরিক শক্তির অভাব থাকলে কি মুক্তির একমাত্র পন্থা এই ভিক্ষা পেশা। নাকি অন্যকিছু? সরকারতো এসব ভিক্ষুকদের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। সেই প্রকল্প কি আদৌ বাস্তবায়ন হয়েছে?

ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে ভিক্ষুক জরিপ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নয় জেলার মধ্যে ৪ জেলার ৫০০ জন করে মোট ২০০০ জনের পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয় সরকার। পরবর্তীতে যমুনা টিভির এক বিবৃতিতে  ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প কর্মসূচির পরিচালক সৈয়দা ফেরদাউস আক্তার বলেন "তাদেরকে আমরা যে পূর্ণবাসন সামগ্রী দিয়েছি রিক্সা ভ্যান কিংবা টাকা পয়সা,সে সব বিক্রি করে ওরা আবারো ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে এসেছে।"

 এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ঢাকায় আসা ৩৭ ভিক্ষুককে তাদের নিজ জেলা ময়মনসিংহ স্থানান্তর করা হয়। এবং নগদ টাকা কিংবা রিক্সা করে দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু দুই বছর পর ৮ জনের কর্মসংস্থানের তথ্য পাওয়া গেলেও,বাকি ২৯ জন ফিরেছেন তাদের আগের পেশায়।

এবার আমার মনে প্রশ্ন জাগে এত সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও ভিক্ষা পেশাকে তারা কেনই বা এত কদর করছেন? দীপিকা পোশাকে কেউ গ্রহণ করেছেন অভাবের তাড়নায় কেউবা আবার স্বভাবের তাড়নায়। অন্যকে তো আবার ভিক্ষুক সেজে অভিনয় করেন। আর তাদের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করছে কিছু উচ্চ মহলের মানুষ! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।

আমার বাস্তব জীবনের একটা কাহিনী তুলে ধরতে চাই, করোনাকালীন তিন মাস মার্চ থেকে মে বের হওয়ার কোন সুযোগ পায়নি আতঙ্ক একটাই কভিড19। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ফুচকা খাওয়ার জন্য পাঁচ বন্ধু মিলে সমবেত হলাম আলী আমজাদের ঘড়ি নিচে সুরমা নদীর পাড়ে। তখন চোখে পড়লো কিছু পথশিশু ভিক্ষার জন্য এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ একজন এসে বলল "ভাইয়া পাঁচটা টাকা দেন সারাদিন ধরে কিছু খাই নাই"করোনাকালীন কথা বিবেচনা করে আমি তাকে ৫০ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিলাম।টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় তার পাশের জন কে বলছিল আর ১০ টাকা হলে উস্তাদের টাকা ম্যানেজ হয়ে যাবে তারপর যাব সব আমার। আমার একটু খটকা লাগল ভিক্ষা করতে এসে আবার উস্তাদ কোত্থেকে এলো? আমি আবার তাকে ডাক দিলাম জিজ্ঞেস করলাম তোমার ওস্তাদ কে। ছেলে মেয়ে দুটি জন্য একটু ভয় পেয়ে গেল বললো ভাইয়া ওস্তাদ কি। তার মানে বুঝতে পারলাম ওদের কে সব শিখিয়ে পড়িয়ে এই মাঠে নামানো হয়েছে। এবার একটু অন্য কৌশল অবলম্বন করলাম।

আমি পকেট থেকে আরও ১০০ টাকার একটি নোট বের করলাম। বের করে বললাম যদি তোমাদের উস্তাদ সম্পর্কে আমাকে বল তাহলে এ ১০০ টাকা তোমার। এবার বলতে লাগলো ভাইয়া আমরা প্রতিদিন ১০০ টাকা করে জমা দিতে হয় সুজন ভাইয়ের কাছে। পাশের জন্য উঠে বললো তবে ভাইয়া সুজন ভাই এই টাকা গুলা নেই না। টাকাগুলা নেই (১)তাকবীর ইসলাম পিন্টু ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। (২)আশিকুর রহমান আশিক প্রভা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের কর্ণধর ও  ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও (৩) রহমান টাওয়ারের মালিক জুনায়েদ আহমেদ। এ তো দেখছি রমরমা ব্যবসা!

তবে একটা হিসেব কষা যাক। যদি ৯৫ জন লোক প্রতিদিন ১০০ টাকা করে দেয় তাহলে সেটি প্রতিদিন৯৫০০ টাকা অর্থাৎ এক মাসে  ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। তারমানে বছরে তিন কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। কোন ইনভেস্ট ছাড়াই শুধুমাত্র মানুষের পকেটের টাকা নানা নাটকীয়তার মাধ্যমে চলে যায় সাধারণ মানুষ থেকে কিছু কুৎসিত মন মানসিকতার মানুষের কাছে। এ যেন নতুন এক প্রতারণার জাল, ছোট ছোট শিশুদের কে কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে এমন হাজারো কোটি টাকা। প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।


গুরুজনরা বলে গেছেন মেধা শক্তিকে কাজে লাগাও। কিন্তু এমন করে যে কাজে লাগাবে মানুষ তা বুঝার উপায় নেই। এবার ওর থেকে বেরিয়ে এল আর ও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। কলেজ থেকে জানতে পারলাম ৯৫ জন শিশু ও বৃদ্ধ মিলে কাজ করে কাজিরবাজার সেতু আলী আমজাদের ঘড়ি নিচে ও চন্ডিপুল পয়েন্টে। আর সবারই নাকি আলাদা আলাদা জায়গা করে দেয়া আছে। ভারতেরও' বছরের শিশুর উপর আস্থা না করে জানতে চাই বিদ্যুতের কাজ থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভিক্ষুকের কাছ থেকে জানতে পারি ওই শিশুদের বলা সব কাহিনী নাকি সত্য। তিনি আরো বলেন, এই  শিশুদের দিয়ে নাকি আবার তাদের গডফাদাররা চুরি ও করায়। একটা মানুষ কতটা নিচে নামতে পারলে এমন জঘন্যতম কাজে তার দ্বিধা বোধ হয় না??

কেউ ভিক্ষা করে সখে কেউ বা শিখে। কারণ যাই হোক না কেন এর মধ্যে কিছু শিশুদের ভিক্ষের কারণটা একটু ভিন্ন ক্ষুধা মিটাতে যেটুকু টাকা প্রয়োজন তার থেকে বেশি অর্থ যখন তাদের পকেটে চলে আসে তখন তাদের মাথায় খেলা করে ভিন্ন কিছু।আজ তারা আসক্তি জমিয়েছে ডান্ডি তে এরপরা আশক্তি জমাবে আরো বড় কিছুতে। বাবা-মার শাসন নেই ভালো মন্দ বোঝার কেউ নেই তাই অনিবার্য গন্তব্য অন্ধকার গুলি। আর যাদের  ক্ষমতায় বসানো হয়েছে শিশুদের রক্ষার দায়িত্বে। তারা যখন ঠেলে দেয় অন্ধকার পথে তখন এই শিশুদের ই-বা দোষ কি? একটা সময় এই শিশুগুলি হয়ে ওঠে চুর,ডাকাত  আর ছিনতাইকারী। সমাজে হয়ে ওঠে অশৃংখল।

বর্তমানে ৬ মাসের শিশুকেও কোলে নিয়ে চলে এই রমরমা ব্যবসা। করোনাকালীন সময়ে মানুষের মন গলাতে শিশু কোলে নিয়েই শুর ভিক্ষাবৃত্তি। অর্থাৎ কোলে শিশু থাকলেই মানুষের মন খুব সহজে গলে যায়, পকেট থেকে খুব সহজেই টাকা বেরিয়ে আসে। এই কৌশলটা তারা খুব ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন। কিন্তু যাদের শিশু নেই তাদের কৌশল টা কেমন?

উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং ডিএমপি অধ্যাদেশ বলা আছে শিশু ভিক্ষাবৃত্তি সহ সবধরনের ভিক্ষাবৃত্তি অবৈধ এবং বে-আইনি। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে স্পষ্ট করে বলা আছে, প্রত্যেকটি শিশুর নিরাপত্তা এবং বেঁচে থাকা তার জন্মগত অধিকার তবে কোনো শিশু যদি ভিক্ষা বৃত্তি বা অন্য কোন চক্রান্তের কবলে পড়ে তবে তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব এ রাষ্ট্রের।

কিন্তু যখন রাষ্ট্রকৃতীক ক্ষমতায় বসানো লোকের মাধ্যমে এসব ভিক্ষাবৃত্তি গড়ে ওঠে তখন এর দায়ভার নেবে কে? এ তো শুধু সিলেটের একটি তথ্য তুলে ধরলাম মাত্র। এমন হাজারো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত এই ভূখণ্ডে। যে শিশু গুলো কলম আর বউয়ের হাতে বিদ্যালয় থাকার কথা সে শিশু এখন রাস্তায় ভিক্ষা করে তাও আবার গডফাদারের ইশারায়।


ঘৃণিত ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করা হোক শিশুদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক, এবং নোংরা মন-মানসিকতার মানুষকে সামনে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে হয়তো এই শিশুগুলো বাঁচার মত করে বাঁচতে পারবে নতুবা ছিনতাইকারী আর ডাকাতের ছত্রছায়া থেকে কেউ রেহাই পাবে না। সরকারের সজাগ দৃষ্টির প্রত্যাশা করছি।

লেখক ব্লগার রেজাউল হক









মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ