দুর্নীতিগ্রস্ত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা।
দুর্নীতিগ্রস্ত বাংলাদেশ আর তার থেকে রেহাই পায়নি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো। করুণা কালীন সময়ে সবচেয়ে দুর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা উঠে এসেছে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় সহ সংবাদমাধ্যমে। দুর্বলতার প্রধান কারণই হলো দুর্নীতি। এত কোটি টাকা বাজেট এর পরেও চিকিৎসা ব্যবস্থায় পৃথিবীর বুকে পিছিয়ে কেন বাংলাদেশ। ভ্যাকসিন নিয়েও দ্বন্দ্বের শেষ নেই।
গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্যখাতে খতিয়ে দেখতে গিয়ে দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করে৷ তার মধ্যে বেশি দুর্নীতি হয়: কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহ খাতে৷ সাদা চোখে দেখা দুর্নীতির বাইরে একটি অভিনব দুর্নীতির কথাও তখন তুলে ধরে দুদক৷ আর তা হলো, দুর্নীতি করার জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা৷ এমন যন্ত্রপাতি কেনা হয় যা পরিচালনার লোক নেই৷ ওইসব যন্ত্রপাতি কখনোই ব্যবহার করা হয়না৷
আর তাতে চমকে যায় দুদক। সূক্ষ্ম কারচুপি করে যাওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। আদালতে দুদক তখন এই দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশ করে বলে, দুর্নীতির কারণেই স্বাস্থ্যখাতের করুন অবস্থা৷ তারা তাদের এই তদন্তপত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি৷ তাহলে কি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দুদকের এই তদন্তকে পাত্তাই দিলেন না? নাকি এটাতে ও খালি চোখে না ধরার মতো কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে?
২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে স্বাস্থ্যখাতের যন্ত্রপাতি কেনায়৷ ২৭টি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটার তথ্য নিয়ে সংবাদমাধ্যম দুর্নীতির এই চিত্র প্রকাশ করে৷ কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি আমাদের উচ্চপদস্থ ক্ষমতাসীনদের।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৮৬ গুণ বেশি দাম দেখানো হয়েছে৷ এক সেট পর্দার দাম দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা৷ ১৭৫ কোটি টাকার নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য৷ রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও চার কোটি টাকার সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি কেনা হয়, যা কখনোই ব্যবহার করা হয়নি৷
২০১৭ সালে টিআইবির খানা জরিপে স্বাস্থ্যখাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ জরিপে অংশ নেয়া ৪২.৫ ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে ঘুস দুর্নীতির শিকার হয়েছেন৷ সেই দুর্নীতির ফল যেন ভোগ করতে হলো এই করোনা কালীন সময়ে।
কিন্তু ,না।সর্বশেষ এই করোনার মধ্যে চিকিৎসকদের জন্য পিপিই এবং এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারির কথা সবার জানা৷ এখনো তদন্তই চলছে, ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ আর কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তা গত কয়েক বছরের প্রেক্ষাপট দেখলেই অনুমান করা যায়। দুদক বেশ কয়েকবার তদন্ত করে রিপোর্ট দেখিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতে টনক নড়ছে না কারোরি।
এই মহামারিতে বিশ্ব যখন স্তব্ধ। মৃত্যুর মিছিল যেখানে থামছে না। ভয়ে কাতর পৃথিবীবাসী ,ঠিক সে সময় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি যেন রমরমা আকার ধারণ করেছে। তাদের মনে এতটুকুও যেন ভয় নেই যে এই মৃত্যুর মিছিলে হয়তো তারাও শামিল হবে। আমজনতার চাওয়া একটাই আমাদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা।
লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন