আগুনের ভয়াবহতা!

আগুনের লিলি শিখার কাছে হার মানতে হয়েছে অনেক জাতিকে  ২১ সালে তা যেন পুরো বিশ্বে অন্য রূপ ধারণ করেছে। অ্যামাজন বন, ইতালি, ব্রাজিল, আমেরিকা সহ বেশ কয়েকটি দেশ আগুনের দাবানলে পুড়ছে প্রতিনিয়ত ।প্রকৃতির সৃষ্ট লিলি শেখা ময় ‘আগুন’ হয়তো মেনে নেওয়া যায়, প্রতিরোধের ব্যবস্থাও নেওয়া যায়, রক্ষা করা যায় নিজেকে, আবার দিনশেষে প্রকৃতির ওপর দোষ চাপানোও যায়! কিন্তু মানুষের সৃষ্ট আগুনে যখন মানুষের মরণ, তখন তা থেকে সান্ত্বনার পাবার উপায় কী? দোষ কাকে দেবেন, নিজেদের? এ ছাড়া আর উপায়ই–বা কী!



বাংলাদেশ নিকৃষ্ট এক মহামারী করোনা ভাইরাস নামক বেদি মানুষকে আতঙ্ক ও ভয়াবহতার রুপ দেখিয়েছে। মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই চাইছে না, দিনে দুই শতাধিকের ওপর মানুষের মৃত্যুর, প্রিয়জনের লাশের ঘানি টানতে টানতে মানুষের যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির রেকর্ড পার করছে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি দেশে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড এবং তাতে মানুষের মর্মান্তিক, মর্মন্তুদ, হৃদয়বিদারক, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত মৃত্যুর ঘটনা কোনোমতেই যেন থামছে না। গত ৮ জুলাই’২১ বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় আগুন লাগে। “ছয়তলা বিশাল কারখানা ভবন থেকে বের হওয়ার পথ (সিঁড়ি) মাত্র দুটি। এর মধ্যে ভবনের সামনের পথটি ব্যবহারের উপায় ছিল না। কারণ, আগুন এদিক থেকেই ছড়িয়েছে। ভবনের পেছনের দিকের পথ দিয়েও কেউ বের হতে পারছিলেন না তীব্র তাপ ও ধোঁয়ার কারণে। ফলে শ্রমিকেরা ছুটতে থাকেন ছাদের দিকে। কিন্তু সবাই ছাদ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। এর আগেই মৃত্যু এসে হাজির হয়েছে”। ( সূত্রঃ প্র/আলো, ১০ জুলাই’ ২১)। ওই দিনই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে ৩ জন মারা যান। সব মিলিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫২ জন নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। আগুনে পুড়ে যেসব শ্রমিক মারা গেছেন, তাঁরা সবাই বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় কাজে আসেন। শ্রমিকদের ছুটি হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। ছুটির আনুমানিক ত্রিশ মিনিট আগে বিকেল সাড়ে ৫টার পর ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। আগুন লাগার পর মুহূর্তের মধ্যে প্রচণ্ড ধোঁয়া তৈরি হয় এবং তা দ্বিতীয় তলায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও কারখানার আহত শ্রমিক সবুজ আলমের বরাতে জানা যায়, তিনি কাজ করছিলেন দ্বিতীয় তলায়। হঠাৎ ভবনের ভেতর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান। তাঁর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। প্রথম ভবনের সামনের সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। পরে দৌড়ে পেছন দিকের সিঁড়ি দিয়ে ধোঁয়ার মধ্যেই নেমে আসতে সক্ষম হন। ছয়তলা ভবনে নিচতলায় কার্টন তৈরির কারখানা। দুই তলায় টোস্ট (বিস্কুট), তিনতলায় জুসসহ বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় উৎপাদিত হতো। আর চারতলায় চকলেট ও লাচ্ছা সেমাই তৈরি হতো। পঞ্চম তলায় ভোজ্যতেল রাখা ছিল। আর ছয়তলায় ছিল কার্টনের গুদামঘর। আগুনের সূত্রপাত যখন হয়, তখন কারখানায় প্রায় ১৮০ জন শ্রমিক কাজে ছিলেন বলে জানা যায়। সেদিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট টানা প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর পরের দিন ( ৯ জুলাই’২১) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়। অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশের কারখানা হাসপাতাল মার্কেট শপিং মল স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। অনেকক্ষেত্রে থাকলেও তা অকার্যকর থাকে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে দুর্যোগকালে তা কোনো কাজেই আসেনা। এক সূত্র থেকে জানা যায়, সেদিন কারখানা ভবনে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ভবনে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা তাঁদের চোখে পড়েনি। ছয়তলার এত বড় ভবনের মাত্র দুটি সিঁড়ি, তা-ও প্রশস্ত নয়। ভবনে যদি অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ভালো থাকত, তাহলে এত প্রাণহানি ঘটার কথা নয়। ভবনের আয়তন অনুযায়ী চার থেকে পাঁচটি সিঁড়ি থাকার দরকার ছিল। আগুনের তাপ ও প্রচণ্ড ধোঁয়ায় আটকে পড়া শ্রমিকেরা মারা গেছেন। অপরদিকে হাসেম ফুডের প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন দাবি করেন, ভবনে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল। সবই আগুনে পুড়ে গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের একজন ঊর্ধ্বত কর্মকর্তার দাবী, ‘পুরো ভবন ঘুরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কিন্তু আমরা খুঁজে পাইনি। এটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলের অগ্নিনির্বাপণ বন্ধে আন্তরিকতার অভাব এবং চরম ব্যর্থতা ও অবহেলার দগদগে এবং তরতাজা উদাহরণ। তাঁরা মুনাফা করতে পারেন কিন্তু শ্রমিকদের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না। যেন গরীব অসহায় দুঃখী শ্রমিকদের জীবনের কোনো মূল্যই নেই।



আমাদের দেশে অগ্নিকান্ড খুন হত্যা ধর্ষণ নির্যাতন নিপীড়ন সড়ক দুর্ঘটনা সহ বিভিন্ন মর্মান্তিক, দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে। আর এসব নিয়ে সারা দেশে কয়েক মাস তোল্পাড় চলে। কিছুদিন পরে আরেকটি ঘটনা ঘটার পরে আমরা আগের সব ঘটনা ভুলে যাই। এবং নতুন ঘটনা নিয়ে সবাই আবার হৈ চৈ শুরু করে দেয়। এর আগে গত ০৪ সেপ্টেম্বর’ ২০ তারিখে নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা এলাকায় মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হন। গত ২৭ জুন’২০২১ ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস গেটের একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু ঘটে এবং আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। পুলিশের ধারণা ঘটনাটি জমে থাকা গ্যাস থেকে ঘটেছে। ভবনের নিচতলাটি একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়৷ আশপাশের ভবনগুলো কেঁপে উঠে এবং অনেক দোকানঘরে আগুন লেগে যায়।

 আমরা ভুলে যায়নি বিগত ২০ ফেব্রুয়ারি’১৯ তারিখে ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটে যাওয়া ভয়ানক মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক মর্মন্তুদ অগ্নিকাণ্ডের কথা৷ সেরাতে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত৷ ওই আগুনে চারতলা ওয়াহেদ ম্যানশনসহ ৫টি ভবন পুরোপুরি ভস্মিভূত হয়৷ আর আগুনে ৭১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন অনেকে৷ 

সূত্র:ইন্টারনেট

 আর এ ঘটনার দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ‘‘ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ তাদের চারতলা বাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ রাখতেন৷ কিন্তু তার জন্য কি কোন লাইসেন্স ছিল? মানুষের জীবনের ঝুঁকি জেনেও অবৈধভাবে রাসায়নিকের গুদাম করার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বাসা ভাড়া দেন৷ আর ওই দাহ্য পদার্থ থেকেই আগুন লাগে৷ কর্মকাণ্ডের পড়ে কেন তদারকি করা হয় তার আগে কি প্রশাসন ঘুমিয়ে থাকে?? অন্যদিকে গত ২৮ মার্চ’ ১৯ তারিখে দুপুর ১টায় ঢাকার বনানীর বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে (ফারুক রূপায়ণ টাওয়ার) অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় । ২২ তলা এভবনের অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ও ক্রমেই সেটি অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জনের মৃত্যু হয় এবং ৭০ জন আহত হন। এক তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে শিল্প-কারখানা ও আবাসিক ভবনে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিকান্ডে সম্পদহানি হয়েছে ৩৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকার। আর ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে দেশের শিল্প-কারখানায় আগুনের ঘটনা কিছুটা কমে এলেও আবাসিক ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বাড়ছে। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন নিহত হয়েছিল। বিগত ২৪ নভেম্বর’ ২০১২ তারিখে আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১১ জন নিহত হয়। তাতে সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় ১০১ জন পোশাক শ্রমিক। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে মাঝেমধ্যেই ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হচ্ছে নিম্নবিত্ত হাজার হাজার পরিবার। সহায়সম্বল ও মাথাগোঁজার শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে পথে বসছে তারা। একই বস্তিতে একাধিকবার আগুন লাগায় অনেকে পথের ভিখারিও হচ্ছেন। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে অন্তত ৫টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর নবোদয় হাউজিং সোসাইটি এলাকার বস্তি, ২১ ফেব্রুয়ারি মানিকনগরের কুমিল্লাপট্টি বস্তি, ১১ মার্চ কলাবাগানের কাঁঠালবাগান বস্তি, ২১ এপ্রিল তুরাগের বালুরমাঠ বস্তি এবং সর্বশেষ গত ৭ জুন রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২০২০ সালে রাজধানীর বস্তিতে ৪১টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে, ২০১৯ সালে ২৮টি, ২০১৮ সালে ৩৩টি, ২০১৭ সালে ৮টি ও ২০১৬ সালে ২৭টি আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসব আগুনে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মূলত বস্তিবাসীর অসাবধানতাই আগুনের প্রধান কারণ। পাশাপাশি বস্তির বেশিরভাগ বিদ্যুতের তার খুবই নিম্নমানের। এর ওপর যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে। বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকেও দুর্ঘটনা ঘটছে। আরে ছোট্ট ছোট্ট ভুলের কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেক তরুণ যুবক কে। প্রাণ হারায় নি শুধু তরুণ-যুবকরা প্রাণ হারিয়েছে প্রত্যেকটি পরিবারের।



বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের বাড়ি নির্মাণের শিল্প কলকারখানা সব জায়গাতেই ফায়ার এক্সিট এবং ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটল  তা থেকে বাচার উপায় ও ব্যবস্থা করেই নির্মিত হচ্ছে উচু উচ ভবন, বাংলাদেশের বেলায় কেন উল্টো?দুর্ঘটনার সময় নির্গমনের জন্য জরুরি ও প্রশস্ত সিঁড়ি না রাখা, সিঁড়ি বা চলাচলের পথে স্তূপকৃত বিভিন্ন মালামাল রেখে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা, বিল্ডিং কোড না মানা, অনুমোদিত নকশা বহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণ,বিদ্যুতের শর্টসার্কিট , গ্যাস বিস্ফোরণ, দাহ্য কেমিক্যাল গোডাউন, রান্নাঘরসহ ছোটখাটো কারণে ঘটে যাচ্ছে বড় দুর্ঘটনা। কিন্তু কেন? মহা মানবিক বিপর্যয়। ফলশ্রুতিতে প্রতি বছরই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অসংখ্য মানুষ হতাহত এবং সম্পদহানি হচ্ছে। ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনে অগ্নিকান্ডের কারণ উল্লেখ করাসহ সতর্কতার জন্য নানা সুপারিশ করা হয়। তাহলে কি তদন্ত আর সুপারিশেই থেমে থাকবে বাংলাদেশ। আইনি কোনো ব্যবস্থাই কি নেওয়ার সময় এখনো আসেনি? এসব সুপারিশমালা খুব কমই বাস্তবায়ন হয়। ফলে দেশজুড়েই বাড়ছে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি। পাশাপাশি আমাদের দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। যে ক্ষেত্রে আগুন নেভানো, মানুষকে সরিয়ে নেয়া এবং জরুরি উদ্ধার কার্য পরিচালনা করা দরকার, সেই সব ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো প্রস্তুতি নেওয়া সময়ের দাবী। সরকারি সংস্থাগুলো তথা তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ম নীতিগুলো যথাযথভাবে পরিপালিত হচ্ছে কিনা তা জনস্বার্থে আন্তরিকভাবে এবং নিয়মনীতি মেনে তদারকি করতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা উন্নত এবং যুগোপযোগী করার পাশাপাশি অগ্নিকান্ডে দায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচারের সম্মুখীন করে শাস্তির ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অন্যথায় বিচারহীনতার কারণে দেশে নিয়মিত অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমাদের প্রত্যাশা মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডে মানুষের অমুল্য জীবন রক্ষা এবং সম্পদহানী বন্ধে সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মনে রাখা দরকার অযত্ন অবহেলায় মানুষকে পুড়িয়ে অঙ্গার বানানোর অধিকার কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র সংবিধান কাউকে দেয়নি।  



বাংলাদেশের শিল্প কল কারখানার জন্য আদৌ কি কোনো নীতিমালা সরকার গঠন করতে পেরেছে? যদি থাকে তাহলে সেই নীতিমালা কী গার্মেন্টস মালিকরা ১০০ ভাগ মেনে চলেন? এই প্রশ্নের জবাব হল দুটোর কোনোটাই নেই। কাগজে কলমে অবশ্য অনেক নীতি কথা আছে। বাস্তবে তা কেউ মানেন না। এই না মানার খেসারত হল গরীব মানুষের আগুনে পুড়ে লাশ হবার রেকর্ড। বছর বছর আগুন লাগে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত রিপোর্টও দেয়া হয়। কিন্তু ফলাফল সব সময় গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষে। কারণ, গার্মেন্টস মালিকদের জোর-জবরদস্তিমূলক উপার্জিত টাকার শক্তি গরীব মানুষের অনাহারী আহাজারীর চেয়ে শক্তিশালী। আইন সব সময় শক্তিশালী পক্ষের তাবেদার। খবরদার, এই বিষয়ে আম জনতার খোঁজখবর নেয়া হারাম। হারাম মানে আসলেই হারাম। যারা আরাম করেন আইন কেবল তাদের পক্ষে কাজ করে। তাদের টাকার জোর আছে। অতএব আইনও তাদের পক্ষে কাজ করবে। এটাই বাংলাদেশের চরম বাস্তবতা।



বাংলাদেশে অদ্ভুত এক শক্তির নাম যেন সিন্ডিকেট, সিন্ডিকেটের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার পরেও টনক নড়াতে ব্যর্থ রাষ্ট্র।সবখানেই এখন যেন সিন্ডিকেটের দাপট। আপনি যদি গার্মেন্টস মালিকদের ডেকে আইন কানুন মানার কথা বলেন, তারা গার্মেন্টস বন্ধ করে দেবার হুমকি দেবে। কারণ, তাদের রয়েছে জোড়ালো সিন্ডিকেট। আপনি যদি আগুন না লাগার বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে হাজির হন, তখন গার্মেন্টস মালিকদের শ্রমঘণ্টার হিসাব আসবে। আইন না মানাই বাংলাদেশে রেওয়াজ হয়ে গেছে। গার্মেন্টস মালিকরা তো টাকার উপরে ঘুমান। টাকার উপরে খাওয়া দাওয়া করেন। টাকাই তাদের একমাত্র সাধনা। আইনের বিষয়ে কোনো জটিলতা আসলে তাও টাকা দিয়ে সামলান তারা। অতএব গরীব মানুষ আগুনে পুড়ে মারা যাবে, এ আর নতুন কী বাংলাদেশে।


পরিশেষে,কবির কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেষ করতে চাই,

'জলের আগুনে পুড়ে হয়েছি কমল,

কী দিয়ে মুছবে বলো আগুনের জল?’

লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ