সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বাংলাদেশ!

 করোনা ভাইরাসের রূপ প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে, সংক্রমনের গতিও যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। গত জুন মাসের লকডাউনের ঘোষণা আসলে ও পরক্ষণে  তা আবার বাতিল করা হয়। কারণ হিসেবে দেখানো হয় ব্যাংক ক্লোজিং।লকডাউন দিয়ে আবার ঈদের আগে উঠিয়ে নিয়ে মোটামুটি সব খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসলো উপর মহল থেকে। আবার ঈদের কেনাকাটা শেষ হতে না হতেই শাটডাউনের ঘোষণা দিলো। ঈদের পর পরি করোনা প্রকোপ চরম আকার ধারন করলো; আর তা কমাতে সরকার শাটডাউন দিলো। তাও বলা হচ্ছে কঠোর লকডাউন। সরকারী প্রজ্ঞাপণে কঠোরতারভাবে সকল কার্যক্রমগুলো পালন করতে বলা হলো। পোষ্টার, মাইকিংসহ প্রচারনা চলছে মাস্ক ও সামাজিক দুরত্বের।


করুনার প্রকোপ ঠেকাতে ৫ তারিখ অব্দি গার্মেন্টস বন্ধ থাকার ঘোষণা করে । ঈদের আগে/ পরে তাই লোকজনকে দেখা গেলো পায়ে হেঁটে, ছোটছোট যানবাহনের করে বহুকষ্টে বাড়িতে ফিরতে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আর বাডি ফেরার আরেকটি কারণ হলো একটা লম্বা ছুটি। দশদিন না যেতেই ঘোষনা হলো ছুটি বাতিল, ১ তারিখ থেকে গার্মেন্টস্ খোলা। সংক্রমণ কী কমতে শুরু করেছে?


একটা চাকরীর উপর একটা পরিবার চলে। একটা চাকরি চলে গেলেই আর একটা চাকরি পাওয়া যাবে এমনটা নয় বাংলাদেশের পেক্ষাপটে। তাই লোকজন চাকরি বাঁচাতে যেকোন মূল্যেই ঢাকা ফিরতে চাই।আবার সেই ভোগান্তি। আবারো হাজার হাজার মানুষকে দেখা যাচ্ছে একই সাথে ভীড় করতে। কোনভাবেই সামাজিক দুরত্ব মেইনটেইন করা সম্ভব হচ্ছে না। গত ঈদের মতোই ভীড় আবার শুরু হয়ে গেলো। 

সূত্র:ইন্টারনেট

আমার প্রশ্ন হলো , করোনা তাহলে বাড়াচ্ছে কে? জনগনের কি সব দোষ? পেটের দায়ে, চাকরী বাঁচাতে একটা মানুষকে দৌড়াতেই হবে বা হচ্ছে?


এ কারসাজি সাধারণ মানুষের দ্বারা হচ্ছে না। উচ্চ মহলে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ক্ষমতাসীনদের অপব্যবহারের কারণেই হয়ে উঠছে। অর্থাৎ উদ্ধর্তন মহল তাদের খেয়াল খুশি মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যখন খুশি লকডাউন, শাটডাউন দিচ্ছেন আবার যখন খুশি উঠিয়ে নিচ্ছেন। কখন কি হবে বা হচ্ছে কেউ বুঝে ওঠার আগেই এসব হাস্যকর সিদ্ধান্ত নিয়েই যাচ্ছেন। এই যে হাজার হাজার শ্রমিক কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া থেকে ঢাকা যাবে তাদের খরচ কতো? সাধারন গার্মেনটস্ এ চাকুরী করে একটা মানুষ কটাকা বেতন পায়? সে হিসাবও আমাদের মাথায় নেই? একেতো করোনাকালীন সময় তার উপর ভাড়া দ্বিগুণ।তাই চাকরি বাঁচাতে মানুষ ছুটছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

 

কয়েকদিন আগে বাসায় আম্মুকে ফোন করলে জানতে পারি আমার পিসতুতো বোন ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছে ।আম্মুকে দেখার জন্য আমাদের বাসায় গিয়েছিল সেখানে নাকি আম্মুকে জড়িয়ে ধরেছে এভাবেই করোনা ছড়াচ্ছে। আমাদের সাধারণ জনগণকে আরো সতর্ক হওয়া উচিত। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা টা এখন খুব দরকার। কারণ বেশ কয়েকদিন আগেই করোনার ধাক্কা থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন অনেকেই।তারা জানেন জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকা কতটা কষ্টের।



 শাটডাউনের কড়া নজরে বাসস্ট্যান্ডে বাস না দেখা গেলেও শহরের বাইরে চুপিসারে দাঁড়িয়ে আছে স্        বাসগুলো। সেখানে অপেক্ষা করছে দালাল মারফতে আসা যাত্রীদের। বিভিন্ন ভাবে দালাল ধরে, কাষ্টমারের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সূক্ষ্ম কারসাজি হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে এরপর  পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। আবার অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাওয়া লোকজন ঢাকা থেকে ৩০/৪০ কি: মি দুরে নেমে যাচ্ছে। কারন একটাই শহরের ভেতরে চলছে কঠোর লকডাউন/ শাটডাউন। তারপর নেই কোন রিক্সা, নেই সিএনজি। যাও আছে তার ভাড়া কয়েকগুণ। অল্প বেতনের কর্মচারীরা আর কোন উপায় না পেয়ে, পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। তাদের অফিস করতে হবে, পেটের ভাত যোগাতে হবে, পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে হবে।কিন্তু কেন এই প্রহসন? লা জবাব।



এত উচ্চমহলের উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরা সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খায় কেন। একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে রাত পেরোলেই যেন অন্য সিদ্ধান্ত।আর ভোগান্তির শিকার সাধারণেরা।একটা সিদ্ধান্ত নিলে একবার নেন যথাযথ পালন করার চেষ্টা করেন তা না হলে করোনা প্রহসন চলতেই থাকবে আজীবন। দেশজুড়ে এখন যা হচ্ছে, ঘটছে সবই হাস্যকর। দালালে আর সিন্ডিকেটে দেশ ভরে গেছে কিন্তু আমাদের তা বলা নিষেধ। আর এসব নাটের গুরু হল ক্ষমতায় বসে থাকা লোকজন বললে তো প্রাণ নিয়ে সংকোচে পড়তে হবে। তাই আমরা চলছি- ‘দেখবো শুনবো বলবো না কোন বিপদে পড়বো না।’



একটু মস্তিষ্ক দিয়ে ভাবুন তো আমরা কি আসলেই কোন বিপদে পড়ছি না? দেশটা কার??দেশটা যদি আমার হয়, আমার ট্যাক্সের টাকায় চলে তাহলে ক্ষতি পুরোটাই আমার। আমার ক্ষতিতো কেউ কোথাও থেকে এনে পুষিয়ে দেবে না? তাই একটু হলেও যে কোন সিদ্ধান্ত মাথা মোটা বলদদের মতো না নিয়ে ভেবেচিন্তে নিন!



উন্নত দেশগুলো এখন আস্তে আস্তে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে কিন্তু আমরা এখনো করোন হ্রস্ব/বৃদ্ধির মারপ্যাঁচে আটকে আছি। মাথামোটার মতো সিদ্ধান্ত না নিয়ে প্রহসন বন্ধ করে সব খুলে দিন; আমাদের ভাগ্যে যা আছে হবে!!!!

লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ