ক্ষমতা !

 আমাদের অভ্যন্তরে স্রোতস্বিনী আছে, সেতু নেই। শেই কবিতাংশটুকু যেন আজ আমাদের জীবনের চরম বাস্তবতা। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি আমাদের মানুষের জীবন জীবিকায় যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে তাতে সাধারণ মানুষের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ধারণও প্রায় অসম্ভব বটে। এই জর্জরিত অবস্থায় রাজনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক নেতা, নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে ভাবনা খুবই দুরুহ ব্যাপার। পরিস্থিতি দিন দিন আরো ঘোলাটে হয়ে উঠছে। এই প্রহসন আমরা আর কতকাল এভাবে সহ্য করে নিতে হবে?



আফগানিস্তানের বর্তমান যে অবস্থা, সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানো যেন তাদের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের প্রকাশ্যে এমন দাঙ্গা-হাঙ্গামা না থাকলেও কোন দেশের সাথে যুদ্ধ না থাকলেও। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ একটা শ্রেণীর লোক তাদের জীবন বাঁচানোর জন্যে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আর তারা হলো খেটে-খাওয়া মানুষগুলো।এমন একটা নোংরা প্রেক্ষাপটে তারা শারীরিক, মানসিক, আর্থিকভাবে সর্বোপরী জীবনের ঝুঁকি, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। করোনা'র ছোবলে ধনীদের ধন-ভান্ডার বৃদ্ধি হয়েছে, পক্ষান্তরে খেটে- খাওয়া মানুষগুলো যেন আরো অসহায় হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবন হারাচ্ছে। প্রতিদিনই নজর কাড়ছে অবুঝ শিশু, নারীসহ নিরীহ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হচ্ছেন। গতকালও খুলনায় অগ্নিদগ্ধে পড়েছে এক পরিবার। এ যেন কোন মনুষ্য সমাজ নয়! মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বার্থ চরিতার্থ করার নোংরা প্রতিযোগিতা চলছে। শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা, সমাপণী পরীক্ষা সবকিছুই মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। একটি অগ্রগামী দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতিকে পুঁজি করা হচ্ছে। এই অবস্থাতাকে আমারা কতদিন মেনে নিতে হবে! একে অন্যের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। দলীয় অন্ধ ভালোবাসা তো আছে তার সাথে।




আমি দৃঢ় সংকল্পে বলতে পারি,আমার দেশের সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অসীম। সাধারণভাবে মানুষের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তে  সত্য উঠে এসেছে অতীতে বারংবার। সত্য তিতা হলেও তা প্রকাশিত হয়েছে কারো না কারো কলমীতে আর তা চিরকালই হবে। এবং তা কারো পক্ষে বা কারোর বিপক্ষে যাবেই। যখন দেখা যায় একটি সত্যের পক্ষ- বিপক্ষ তৈরী হয়েছে, সেখানে শুরু হয় নোংরা নিকৃষ্ট খেলা- যার অন্যায় বলি হয় প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষগুলোই, এই আমরাই।



বাংলাদেশে রাজনীতির মারপ্যাঁচ এর নিকৃষ্ট খেলা বহু আগে থেকেই। বিশ্ব দেখেছে ২০০৯,২০১৩ সালের নিষ্ঠুর দৃষ্টান্তের পর ২০২১সালে এসে যে দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়েছে তা শুধু মাত্র অবাধ, নিরপেক্ষ বা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তা নয় বরং তা আন্দোলনের নামে বর্বরতা, নৃশংসতা ও সহিংসতার সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ক্ষমতার লড়াই এ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে , সেই মিছিল যেন থামছেই না।আর তা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে ‘দুরভিসন্ধির’ কাঁদা ছোড়াছুড়ি। নিরহ খেটে খাওয়া মানুষ গুলোকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অকালে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় আজ কত পরিবার অসহায় হয়েছে তার একটা আদমশুমারি করলে হইতো আমাদের মনে নাড়া দিতে পারে।



একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার আর বিরোধীদল। রাষ্ট্রের নাগরিকদের অভিভাবক হলেন সরকারি ও বিরোধীদল। রাষ্টের নাগরিকদের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের এবং সেখানে কোন গাফিলতি দেখলে তার সরকারের সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব বিরোধীদলের। এটাই একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রচলিত আইন। কিন্তু দায়িত্বশীল এই দুই অভিভাবক যখন তীব্র বৈরীভাব নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ায় তখন নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি একটি প্রহসনে পরিনত হয় এবং তাদের আসলেই যাওয়ার কোন জায়গা থাকে না। আমরা এখন সেই ঘোর অনিশ্চয়তায়। মৌলিক অধিকার থেকে শুরু করে সর্বোপরি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি আমারা।



বর্তমানে বাংলাদেশে বিরোধী দল নামে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া টা যেন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে।  অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে বিরোধীদল যে সরকারকে চাপে ফেলবে বা দাবি আদায় করবে তা ভাবাটা যেমন কঠিন তেমনি বিদ্যমান জনসমর্থনকে কৌশলে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের বিরোধী দল যে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে না তা বলার কোন সুযোগ নেই। দেশে এখন অঘোষিত স্বৈরতন্ত্র চলছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ আর গদি ঠিকানোর জন্য আমাদের ক্ষমতাসীন দল প্রতিনিয়তই মন্দ থেকে মন্দরতর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে আর এর বলি হচ্ছে সাধারণ জনগণ। যে জনগণ সব ক্ষমতার মালিক সেই সাধারণ জনগণ আজ তাদের জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই নিকৃষ্ট ফেলনা থেকে মুক্তি না পেলে, ডিজিটাল সোনার বাংলায় সাধারন মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনই ঘটবে বলে আমার মনে হয় না।


ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি ভবিষ্যতেও পারবে না।সত্যের জয় হবেই হবে।আমরা সাধারণের মনের ভিতর তীব্রআশা নিয়ে অপেক্ষা করছি অচিরেই কেউ হয়ত একটি সুস্থ সুন্দর দৃষ্টান্তস্থাপন করতে এগিয়ে আসবেন, কেউ হয়ত আমাদের স্বাভাবিক জীবন এবং নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেবেন। এটা অনস্বীকার্য যে যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের দায়িত্বটা সবসময়ই বেশি। তাদেরকেই যে কোন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক এবং অর্থবহ মূল দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু তাই বলে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ, গুম-হত্যার আহাজারি, সাধারণ মানুষের মৃত্যুর মিছিল  দিয়ে গদিতে টিকে থাকার মাধ্যমে নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করে সাধারন মানুষের জীবনে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্টের সর্বোচ্চ নির্বাহী বা অভিভাবকের কাঁধে আমরা এই সাধারণ চাওয়ার ভার অর্পন করতেই পারি। 



 বর্তমানে সোস্যাল সাইটগুলোতে আমরা অতিমত্রায় ইউজার হওয়ার কারণে বুঝে না বুঝে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। আফগানিস্তানের ইস্যু নিয়ে অনেকে ট্রল করতে দেখেছি তাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করি , দয়া করে সহিংসতা নিয়ে উল্লাস প্রকাশ বন্ধ করুন। আমরা মানুষ। আমরা আমাদের বিবেক বিসর্জন দিতে পারিনা। আমাদের রাজনৈতিক চেতনার চাইতে মনুষ্যত্বের চেতনা অনেক বেশী মূল্যবান এবং এই দুঃসময়ে সেটি ভীষন জরুরী।

লেখক: ব্লগার, রেজাউল হক।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ