বাংলাদেশ ভারত

 বর্তমান বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কিছুটা হলেও ভারতের প্রভাবমুক্ত  হচ্ছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশে এযাবতকালের সবথেকে বড় প্রকল্প কিন্তু এ প্রকল্পে নেই ভারতের কোন অবদান চিনা ঠিকাদারদের মাধ্যমে গড়ে উঠছে আমাদের এই পদ্মা সেতু । কিন্তু একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে চিনা কর্মরত নাগরিক ও বাংলাদেশী নাগরিকদের।


বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর নানা পদবীর অফিসারদের মধ্যেই একটি চরম উষ্মা কাজ করে বলে আমি জানি। সেটি হচ্ছে সারা দেশে নানা পরিচয়ে র-এর এজেন্টে সয়লাব।কি বীমা, কি গার্মেন্টস সেক্টর, কি রাজনীতি, কি ব্যাবসা, কি মিডিয়ায় কিংবা কি আদালতে। প্রতিটি স্থানে র-এর এজেন্টে সয়লাব বলেই অনেকেই নানা আলাপে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের সর্বত্র মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে আছে RAW নামে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের কিছু খুনের সাথে জড়িত আছে এই গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থা এসবের কোনো তদন্ত করেনি। ২৩ জুন পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী জো জিয়াং কে গুম করে ভারতীয় বাহিনী। ভারত নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশী মিডিয়া গুলো গুমের কাহিনী পানিতে নিখোঁজ বলে চালিয়ে দেয়। সেই রাতেই আটক হয় ভারতীয় গোয়েন্দা বিজয় কুমার রায়। জাজিরা প্রান্তে ধরা পড়াসহ ১১ ভারতীয় গোয়েন্দা কে আটক করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের যে অনাস্তা তৈরি হয়েছিল তা কিছুটা হলেও দূর হচ্ছে। বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান সফিউদ্দিন আহমেদ মানুষের আরেক আস্তার নাম। পিলখানা হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে গৃহপালিত আচরণ এতদিন মানুষ দেখেছে তারে কিছু ব্যতিক্রমী ও করছে এখন।



 

ভারতের রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং এর এই শাখা পুরো সেই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গরুর হাটের চাঁদাবাজ পর্যন্ত। এই তথ্য শুধু আমি আজ হঠাৎ করে লিখছি তা নয়, এই কথা সকলেই জানেন কিন্তু কেউ বলেন না।

ডিজিএফ এর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে আবদ্ধ হওয়া  মোহাম্মদ আদনান কে মেরে ফেলতে চেয়েছিল ভারতপন্থী সেনাবাহিনীরা কিন্তু  বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাকে রক্ষা করেছে। সবশেষে ভারতীয়রা তাকে খুন করতে পারেনি।একই ঘটনা ঘটেছে মাওলানা মাহমুদুল হাসানের বেলায় ও। ভারতীয় এজেন্ট জেনারেল আজিজ এর পর কিছুটা স্বস্তির আশ্বাস মিলছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর থেকে।


করোনা কালীন সময়ে চিনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়া হলেও সচিবালয়ের ঘাপটি মেরে থাকা ভারতীয় এজেন্টরা তা হতে দেয়নি। এরপর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন কিনার জন্য টাকা দেয়া হলেও ভারত বরাবরের মতোই বাংলাদেশকে প্রতারনার জালে ফাঁসিয়ে দেয়। এরপর আবারও চিনা ভ্যাকসিন আনার চুক্তি স্বাক্ষর হয়, অন্যান্য দেশের থেকে কম দামে ভ্যাকসিন চুক্তি হলে তা গোপন রাখার জন্য অনুরোধ করে চীনা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ভারতীয় দালাল মতিউর রহমানের প্রথম আলো বিষয়টি প্রকাশ করতে উঠেপড়ে লাগে। প্রথম আলো ব্যর্থ হলেও  কয়েকদিনের মাথায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাহিদা আক্তার চিনা টিকার দাম গণমাধ্যমে ফাঁস করে দেন।


মনে করিয়ে দিতে চাই কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে লষ্ক  ই তাইয়েবার এক জঙ্গীকে গ্রেফতার করে বিমানবন্দর পুলিশ। বিডি নিউজ ২৪ ডট কমের একটি সংবাদে জানা যায় সেই জঙ্গিকে ঘন্টা খানিকের মধ্যে র এর প্রতিনিধির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। পাব্লিক যখন সংবাদটি শেয়ার দিয়ে জানতে চাইলো বিমানবন্দরে র-এর প্রতিনিধি এলো কোথা থেকে, অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি ১০ মিনিটের মাথায় সেই নিজের লিংক গায়েব হয়ে গিয়েছিলো। এই ঘটনা থেকে হলেও ভারতীয় এজেন্ট দের শক্তি কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়।


ভারতের নতুন ফন্দিতে আটকা পড়ে যান বাংলাদেশের মাথামোটারা। গুটি হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের নায়িকাদের। জয়া আহসান,বিদ্যা সিনহা মিম, নুসরাত ফারিয়াসহ ঢজন খানিক নায়িকা আছেন এর তালিকায়। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া পরিমনি ও সাকলাইন এর কাহিনী তার ইঙ্গিত বহন করে।


এসব বিষয়ে কথা বলতে চাই না অনেকেই। অনেকেই বলাটা হয়তো ভুল হবে? সেই দেশে কারোই বলবার সাহস নেই। আমরা ভুলে যাইনি ২০১৮ সালে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ এর কথা। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে শুধুমাত্র মুক্ত মতামত প্রকাশ করার জন্য। বাংলাদেশে বসে এই লেখাটা লিখলে কালকেই আপনাকে চলে যেতে হোতো ঘেচুক্ষেতের ১৪ তলার অফিসের ইন্টারোগেশন কক্ষে কিংবা অমুক অঞ্চলের কালো ঘরে কিংবা জয়েন্ট সেলের অন্ধকার ঘরে। গত বছরের এমসি কলেজে টর্চার সেলের কথা হয়তো আমরা এখনো ভুলিনি।


সেই দেশটি ক্রমশ ভারতের একটি অঙ্গ-রাজ্য হয়ে গেছে গত প্রায় কয়েকটি দশকে। কিছু সম্প্রদায়ের লোক প্রকাশ্যে বলছে আমরা বাংলাদেশকে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে দেখতে চাই। ভারতের সাথে বন্ধুত্বের নাম করে স্রেফ সেই দেশকে সকাল বিকেল বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু কেন? আর এসব বিষয়ে মুখ খুললে গুম-হত্যা তো আছেই।দেশ বিক্রি আলু আর পটল বিক্রির মত পলেথিনের ব্যাগের মধ্যে ভরে বিক্রি করা যায়না বলে সেটি অনুধাবন করা কিংবা এই বক্তব্যের বিপক্ষে কথা বলা হয়ত সহজ কিন্তু দেশের স্বার্থের প্রশ্নে প্রতিটি স্থানে স্থানে ভারতকে কদমবুসি করা হচ্ছে। কি সেটি রাজনীতি, কি সেটি ব্যবসা, কি সেটি ক্রীড়া কিংবা কি সেটি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে।



২০০৯ সালে  পিলখানা হত্যার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতীয় এজেন্টরাই কাজ করেছে।৫৭ জন আর্মি অফিসার সেই দেশে নির্মম্ভাবে খুন হন। সেই হত্যাকান্ডে এই র-এর ভূমিকা নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা অনেকেই বিষ খেয়ে বিষ হজম করে ফেলেছেন কেবল মৃত্যু ভয়ে।এমনও কথা প্রচলিত রয়েছে যে বাংলাদেশের সংবেদনশীল স্থানে র-এর চৌকশ কয়েকটি দল নিয়োজিত রয়েছে সব সময়। এমনও জানা যায় যে বাংলাদেশে আইন শৃংখলা বাহিনীর উপর খবরদারি করে কিন্তু তাঁরা কিছু বলবার সাহস পান না। নিজের জীবনের পরিবারের দিকে তাকিয়ে চুপ করেই কর্মজীবন শেষ করতে চান অনেকেই। বাকশক্তি, মুক্ত চিন্তা ,মুক্ত মতামত বন্ধ করার প্রয়াসেই ব্যস্ত ভারতপন্থিরা।


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে টনে টনে দিদিকে ইলিশ দিয়ে আসেন, আম দিয়ে আসেন, সেটি আবার চীন সরকারের মৌন-মালিন্যের কারণ হওয়াই পাকিস্তানকে আম পাঠিয়ে চীনের মন রক্ষা করেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী তারপর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেও গলা জড়িয়ে আদর দিয়ে আসেন কিন্তু সেই দেশের প্রাপ্য হিস্যার পানি আনতে পারেন না। পানি আনা দূরের কথা বরং সেই দেশের একটি নদীর পানি ভারতে দিয়ে দেবার অসম চুক্তি করে আসেন।


বাংলার মুক্ত চিন্তাময়ী মানুষেরা নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে, দেশ এবং জাতিকে রক্ষা করতে সাহসিকতার সাথে লেখেন বা বলেন। বাংলাদেশের এমনই এক সাহসী তরুন ভারত মাতা'র বিরুদ্ধে লিখেছিলেন সেই অসম বন্ধুত্বের কথা। ফলাফল হয়েছে  ধীরছাত্রলীগের হেলমেট পরিহিত গুন্ডাবাহিনীর একটি দল সেই সাহসী তরুনকে তাদের ঘরে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে এক তলার সিড়ির নীচে ফেলে চলে যায়, শান্ত, সুস্থির তাল ও লয়ে। আমরা এতসব ভয়াবহ অন্যায়, অবিচার দেখার পরও চুপ করে থাকতে হয়। এখনই সময় আমাদের সোচ্চার হয়ে উঠার।



লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ