শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলায় স্বস্তি ফিরেছে


কোভিড ১৯ ভাইরাসটির তাণ্ডবে পুরো বিশ্ব লন্ডভন্ড। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ছয় কোটির বেশি গেছেন ‌১৫ লাখ এর কাছাকাছি। বাংলাদেশে মার্চ মাসের 8 তারিখে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ১৬ ই মার্চ থেকে সরকার আমাদের শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে প্রথমে শিক্ষাব্যবস্থার বন্ধ করার ঘোষণা দেন। অথচ দেড় বছর সময় চলে গেলেও খুলে দেয়া হয়নি পাবলিক থেকে কিন্টারগার্ডেন কোনো রকমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ধাপে ধাপে দুই মাস এক মাস বলে বলে সেপ্টেম্বর ডিসেম্বর জানুয়ারি করতেই থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


সূত্র:ইন্টারনেট


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারায় ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই এইচ এস সিতে অটো পাস করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অপরদিকে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা হবেনা স্কুলের প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত। প্রত্যেকেই পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়ে যাবেন অটো পাশে এ ঘোষণা আসলো শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। পুরো দেশ জুড়ে রয়েছে 28000 এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। আর নন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা 37 হাজারের কাছাকাছি। শিক্ষকের সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। এমপিওভুক্তরা বেতন পেলেও নন এমপিওভুক্ত প্রায় দুই লাখেরও বেশি শিক্ষকেরা করোনা কালীন সময়ে কোন রকম বেতন দেওয়া হয়নি। সরকার তাহলে তাদের জন্য কি সাহায্য করলো? সরকারের ব্যবস্থাপনা ছাড়া আরো একদল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে বাংলাদেশে কিন্টারগার্ডেন  নামে যারা সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। সে সময় অনেকেই বলেন বেতন বন্ধ হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে এমন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন উনারা। এ যেন এক কঠিন বাস্তবতা।


করোনাকালীন অবস্থা দিন থেকে দিন যেন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নন-এমপিওভুক্ত ও কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের কথা বর্ণনা করা মুশকিল। আর এ শিক্ষাব্যবস্থা একটা ব্যবসায় পরিণত হওয়ায় যে কেউ খুলে বসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নেই নিজস্ব ক্যাম্পাস ভাড়া করে বাসা নিয়ে চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আয়ের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কিন্তু করোনার জন্য গত দেড় বছর ধরে সেটাও বন্ধ। ফলে স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ,বাসা ভাড়া দিতে না পারায় স্কুল বিক্রি হচ্ছে স্কুল বন্ধ করে দিতে হচ্ছে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কিন্টারগার্ডেন গুলো। আর যেগুলো অনলাইন ক্লাস এর মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে সেগুলো নিয়েও রয়েছে নানান অভিযোগ।


এবার একটু কথা বলতে চাই বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে। এমপিওভুক্ত স্কুল গুলোতে নেই কোন অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা ছাত্রদের পড়ালেখার উপর নেই কোনো চাপ ঘরে বসে বসে ছাত্ররা টিকটক আর অনলাইনে সময় কাটাচ্ছে। অনেকে বা পা বাড়াচ্ছে ধ্বংসের দিকে। এই সময় কাজে লাগিয়ে অল্প বয়সে বাল্যবিবাহ দিয়ে দিচ্ছেন অনেক গার্ডিয়ানরা। যেখানে কিন্টারগার্ডেন আর নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা জীবন বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছেন সেখানে স্কুল না করে বিদেশে থাকা সত্য দুর্নীতির মাধ্যমে অনেকেই পেয়ে যাচ্ছেন তাদের বেতন-ভাতা।কে নেবে এই দায়ভার? 


বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি বরংবার চোখে পড়েছে। অনকের লেখনীতে উঠে এসেছে দুর্নীতির কথা। শিক্ষা নিয়ে আমি প্রথম লিখেছি এটি নয় শিক্ষা নিয়ে আরো অনেকেই এর আগে লিখেছেন। কিন্তু তাতেও কোনো টনক নড়ছে না বরঞ্চ শিক্ষাব্যবস্থার দিনদিন রসাতলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ বিদ্যালয় নির্মাণের টাকা বিদ্যালয়ের বইপত্র সহ সবখানেই দুর্নীতি বাংলাদেশের নিত্য বিষয় হয়ে উঠেছে।


বলছিলাম বাড়ি ভাড়া না দিতে পারায় অনেকেই বিক্রি করে দিয়েছেন স্কুল প্রতিষ্ঠান কেউ বাসে ছিল স্কুল খুলার আশায়। কিন্তু সরকার প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছে সঠিক সময়েই খুলে দেয়া হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু দিন যতই বেড়েছে ততই কিন্টারগার্ডেন স্কুলগুলোর মালিক শিক্ষক আর কর্মচারীদের বিপদ ঘনীভূত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার পরও কেন বন্ধ ছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কল-কারখানা শিল্প গার্মেন্টস সবকিছুই যেখানে খুলে দেয়া ছিল সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কারণটাই বা কি ছিল?? শিক্ষা মন্ত্রণালয় বারবার বলে গিয়েছিলেন এক বছর বাচ্চারা স্কুলে না গেলে কিছু হবে না। কিন্তু এক বছরে কতগুলো শিক্ষক আর প্রতিষ্ঠানের মালিকের রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে তার হিসেব নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সেইসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার?



অবশেষে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। অনেকে হয়তো বা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। ছাত্র-ছাত্রীরা উৎফুল্ল মেজেছে ক্লাসে যাচ্ছে। আমরা চাই সবার আগে শিক্ষা কে প্রাধান্য দেওয়া হোক। আজকের শিশু আগামী দিনের সুনাগরিক হ‌ওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। অত্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্র থেকে দুর্নীতি অপসারণ করা হোক।


লেখক:ব্লগার,রেজাউল হক।








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতি

নতুন সমাজ ব্যবস্থায় হাটছি আমরা

প্রসঙ্গ: ধর্মওয়ালা শাসক শোষক বনাম অভিজিৎ